Friday 26 January 2018

শুভদীপ নায়ক







তিনটি কবিতা


রৌদ্র ছড়ানো উঠোন শীতের কবিতাগুচ্ছ

অধিক আড়াল ছিল যাতে
সম্মুখ খোলা আছে যার
প্রেরণার মতো মৃত্যুতে
জন্মও প্রেমহীনতার

নিভন্ত মোমবাতি তাই
আঁধারের মতো এক ঘরে
আকণ্ঠ ভরা বেদনায়
আত্মাকে ভালোবেসে মরে

সন্ধেতে ফুটে ওঠা ফুল
ভোর হতে ঝরে ঝরে পড়ে
প্রবাসী প্রেমের যত ভুল
দমকা বাতাস পেলে নড়ে

জীবনের ঘরে বসে কবি
মুখোমুখি চেয়ে থাকে রাতে
যে রাত এঁকেছে তার ছবি
ক্যানভাস ভরা বেদনাতে

তবু বলি, এই পোড়া ঘরে
যুবতী জীবন কেন বাঁচে ?
প্রতিরাতে ঘোর লাগা জ্বরে
মানুষ বানিয়ে তোলে ছাঁচে

'সে যাবে পাতাগুলো
ধূসর শীতের বুকে জানি
শূন্যে উড়বে ছাইধুলো
শরীর মনের টানাটানি

যাকে তুমি বলো মায়াজল
যার নামে বেঁধেছ গাঙুর
সে কেমন অমৃতফল ?
কবিতাগুচ্ছের আঙুর ?

বিদ্রুপ, নাকি বিভীষিকা ?
আলাপে আলাপে বাড়ে আলো
লেলিহান হোক তার শিখা
বিদ্যুতে যারা জন্মালো |




কাগজের যুবতী


কাগজের শরীরবাতাসে বুনেছে সমুদ্র ফেনার ঢেউ
মৃত্যুগুলো সাদাপাংশু শরীরে বাড়ে শ্যাওলাচেরা চেরা
জিভ নিয়ে এগিয়ে এসেছে মুখের কাছেঅন্ধরাতে
তার ক্ষিপ্র আঙুলে ভরা দুই হাতচেপে ধরে
দুই চোয়ালমেঘের মতো টসটসে জলধি
তার ঠোঁটেযেন বুকের ভিতরে বেঁধেছে মানববোমা



আহত সর্বস্ব মেরুদণ্ড দিয়ে ঝরে হিমরক্তস্রোত
বাদামী বৃন্ত হয়ে ওঠে শ্মশানের মাটিতার
চামড়ার নীচে কামড়ে ধরে ঘুণপোকাদুধের
বাটি চলকে পড়েহঠাৎ ঝড়ে কিংবা শরীরপোড়া
আগুনে নষ্ট হয় সন্ধ্যাতারার মতো যুবতীটি


আয়নার সামনে খুলে রাখে কালো ব্রাতোশকের
নীচে তার বরফজমা শরীর পোড়েআমার
মৃত আঙুল নিয়ে খেলা করে তার শিউরে ওঠা
ঠোঁটবুক ঘামেস্তনের শীর্ষ থেকে বেড়ে ওঠে
গাছপরবাসী পুরুষের মতো প্রতিটি রাতে আমি
জড়িয়ে থাকি তাকেএকেকটি নিসর্গ
রাত ভেসে যায় তার শরীরী অববাহিকায়


জড়িয়ে থাকি নারীমাংসসেও খুবলে খায় পুরুষের
শাঁসঝলসে ওঠে ভোরের আলোয়
নরকঙ্কালতার ব্লাউজের নীচে সাঁতরে বেড়ায়
মাছহাঙরের কানকো ভাসে ত্রিবলীর গভীরে
ন্যাংটো দেহের ঘাম রুমালে মুছে ধরায় বিড়ি
মদের গ্লাসের একেকটি চুমুকেপেটে পুরে নেয় লবনসাগর



রক্ত ফুটতে থাকে যোনিতে জমানো কয়লার আঁচে




শরীরের ব্যারিকেড



পুঁজ ,রক্ত, স্বেদ, জমা ভীমরুলের চাকে
তুমি জমিয়েছ রাতের রস, উৎকণ্ঠা
মাটি দিয়ে গড়েছ স্টেশনগুলো
এখন নিজের শরীরে তুমি আর্তনাদ ঢালো
গরম তরলে ভাসাও ঊরুদেশ, বস্তিদেশ
বুকেতে শ্বাসনালী, গাছপালা নেই
ঠাসা মরুভূমি, ধূ-ধূ বালি, কুয়োতলা হয়ে ওঠে
বেশ্যাপাড়ার বাড়ি, তুমিতো গুটিভাঙা কীট
তুমিতো আঠালো রাতের বিষ, তুমি নারী



বরফের টুকরো ঝুলিয়ে রাখো স্তনে
গলুক ধীরে, ভিজে আসুক অন্তর্বাস
নইলে ঘাসেরা আবার গজিয়ে উঠবে
তোমার শরীরে, গর্তে ঢুকবে ময়াল
আঁশটে গন্ধে ভরে যাবে বাড়ি
এমনিতে গর্ভ ভর্তি এত মেঘ এত কালো
লৌহ ভেঙে ঝরে লালা বিদ্যুৎ চমকায়
তোমার নগ্ন মোহনায়


সমস্ত পুরুষ পুরেছ পেটে, বিক্ষুব্ধ
অনুসন্ধিৎসু নজরে খাও একরাশ
শরীর, প্রচণ্ড উত্তাপে ফাটে গ্রহ-তারাপুঞ্জ
নিঃশ্বাসে ওড়ে পরাগ, দেহসাগরে
ভাসে মৃগনাভি, তাই প্রতিটি সুরার গ্লাসে
চলকে ছিটকে পড়ে পোশাকহীন তোমার যৌবন



কি দেখব আড়ালে ? যার জন্যে
টেনে আনো ঘরে, পর্দা ফ্যালো জানলায়
ছিটকিনি তুলে পিঠ দিয়ে দাঁড়াও দুয়ারে
খুলে দাও বন্দীশালার মতো বুক, পলাতক
কয়েদীর দল এককালে খুবলে খেয়েছে মুখ
এখন সেইসব অতীতের শিরা, উপশিরা,জালক
গা থেকে পালক খসার মতো খসিয়ে দাও
শীতের গরমে নতুন প্রেমিকের ভাপে
বাষ্প হয় ক্ষুধা, হ্যাঁক্ষুধাই বলব
যে শরীর একদিন হবে মা , কেন তা এতদিন
চুন-লবনের ভরা খাদে পাথর হয়ে ছিল
কেন বাদমগাছের মতো এতদিনে গর্ভবতী হয়নি
পান পাতা তোলেনি দুহাতে, ধনুকছিলার মতো
ক্ষতবিক্ষত শিরদাঁড়া নিয়ে শুয়ে ছিল
পুরুষ বুকের পরে এতদিন এতরাত ধরে  



বেশ, তাহলে দুহাতে খোলো সিক্ত বাসবী
দেখাও যত্ন করে তন্বী মেয়ের বুক, তীব্র অসুখ
কফির মতো গাঢ় বাদামী মধ্যবিন্দু , কাজলের
সমস্ত কালো জমাও তারারন্ধ্রে , নাড়ি কেটে
শূন্য করো জরায়ু, সেখানে চাঁদের উৎসব
শোকে বিসর্গ আলো, তাপ , পাপ সেখানে
যুদ্ধকালীন ঘোড়াদের আস্তাবল
ছিঁড়ে খুঁড়ে খাই শাকপাতা, তৃণভোজীর দাঁতে
মাড়িতে রোজ যে লালসা ফুটে ওঠে তা মাখাই
তোমার শাড়িতে , ঘৃণ্য অতিঘৃণ্য অপরাধী আমি
দুচোখে খড়কুটো জ্বলে , যখনই পোড়া গা পোড়া
দুহাত নিয়ে ছুঁয়েছি তোমার বুক-পেট-পিঠ
শুকিয়ে খসখসে হয়েছে চামড়া, রাতের বারুদজমা
রাজপথে এসো , হাত ধরাধরি করে ব্যারিকেড ভেঙে
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালাই আমরা






No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...