Friday 26 January 2018

তন্ময় চট্টোপাধ্যায়





 গুচ্ছ কবিতা



কাগজের নৌকা

আমি উত্তর খুঁজি নদীর দিকে মুখ করে
গড়িয়ে চলে যাই মোহনায়,
আমি উত্তর খুঁজি সমুদ্রের দিকে চোখ মেলে
যাই সবকটা দ্বীপের শেষ ঘাস-জমি অবধি,
পার করি সব জলপথ
দিগন্তে জলরাশির দিকে হাত বাড়িয়ে তুলে আনতে যাই উত্তর-
এক প্রবল নৈঃশব্দ্য হাওয়ায় উড়ে ক্রমে আছড়ে পড়ে চোখ মুখ গালে,
লেগে থাকা জলকণা শুধু চিকচিক করে রাতে
দূরে শুধু শূন্য যা কিছু পূরণ করে হাওয়া
কোথাও কোন বিন্দু নেই যে আমার উত্তর এনে দেবে;
অথচ যা কিছু ডুবে যাওয়া সব জলেই আমি নিশ্চিত
তাই তো ছুটে আসা জলরাশি চিড় করে দেখা
শেষে শূন্য চোখে বাড়ি ফিরে আসা..

তিনদিনের অকাল বৃষ্টি জলে দোরগোড়ায় ভেসে এলো কাগজের নৌকা,
সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি তরতর

শুধু কাগজ নয়, শুধু ভাঁজ নয়-
খুলে দেখি তাতেই লেখা আছে যাবতীয় উত্তর....


ভগ্ন দিন

হেলে পড়েছে আলো বারান্দায়
সোজা পথ সোজা চোখে চোখ রাখা বেঁকে জঙ্গলে মিশে যায়  
বাগানের মাঝে একা বাড়ি
শুকিয়ে যাওয়া ঘাসের গোড়ায় গতকালের সূর্যাস্ত
উল্টো হাওয়ায় নিয়মে খসা পড়া পাতাও মাটি থেকে গাছে গিয়ে জোড়ে
শিশির জমে থাকে মূলে!
পড়ে আছে এক পাটি জুতো
কাঠবেড়ালি ছুটে ঢুকে পড়ে গর্তে
সকালে পাখিরা ফিরে সাপলুডো নিয়ে বসে
ধোঁয়াশা নেমে গিলে নেয় বাড়ি
ফুল গোটায় ক্রমে তার মেলে ধরা দিন
তর্জনী চেপে ধরে ঠোঁট নিস্তব্ধতা বুকে নিয়ে খসে যায় কুঁড়ি,
আধ পোড়া গোল্ডফ্লেক পড়ে থাকে গোলাপ গাছের গোড়ায়,
শহরের ঠোঁট তাতে লেগে আছে
ধিক্কার আর নোনায় খসে পড়া পাঁচিল ওপারে রক্তের দাগ,
মিছিল স্লোগান ফোটানো কারুকার্য....
এপারে মিথ্যে সকাল, পড়ে আছে ছুঁচ মুখে নিয়ে সুতো

ওপারে হাজার পায়ের ছাপ, মাঝে পড়ে বাকিপাটি জুতো...

প্রেমের কবিতা

চিঠি পড়ে আছে ভাঁজ খোলা
আঙুলের ছাপ লেখা সব বাষ্পীভূত হয়ে গেছে কবে

খামের ঠিকানা আলোকিত!
পাহাড়ের কোলে যে আলো হারায় সেই অন্য প্রান্তে গোধূলি

সব হাড় ক্ষয় যাচ্ছে জেনেও প্রেম পীড়িত মৃত কবি দিগন্তে রেখে গেছে তার খুলি...


আগামী....

দশ আঙুল তখনও ছিল নরম, জলেতে চোবানো

তালু জুড়ে গাছ, বিস্তীর্ণ উপত্যকায় ঘাস,
রেখা ধরে মিলন
গাঁট ধরে ছিল সংসার কাব্য আকাশ সবশেষে ডগায় চাঁদ

ওসব পুড়ে ছারখার
জলের ধারা গড়িয়ে যায় দূরে রাতের গভীরে;
ঠিক যেখানে শেষ সেখান থেকেই নতুন সূর্য উঠবে কাল

এখন উড়ে বেড়ায় ছাই  
গলা জুড়ে কালশিটে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেহ- ঠিক এমনটাই ছবি

সবকিছু সরিয়ে মাটি খুঁড়ে নতুন বীজ পুঁতে যাচ্ছেন মৃতদের কবি...


No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...