Friday 26 January 2018

মনোনীতা চক্রবর্তী



গুচ্ছ কবিতা



ইশতিহার

না-লিখলেআমি না-লিখলে কোথাও চরাচরের কোমর ছত্রিশ থেকে আটাশে 'সা'-লাগাবে না। না-লিখলেআমিআজীবনের তৃষ্ণা ফিতে ছাড়া ওয়াক্সড কাঁধ ঢাকবে না। অতিবেগুনী রশ্মী মৈথুন শেষে গা-ধুয়ে সান-প্রটেক্টরের পাফ বুলোবে না। খুড়তুতো যে-হাঁসটি বাধ্যতায় অথবা অবাধ্যতায় মজুমদের পুকুর পার হওয়া ছেড়ে দেবে না! না-লিখলে আমি, দৈনন্দিন,ঈশ্বরের নকুলদানার বদলে বর্ধমানের মিহিদানা জুটবে না।  টাকিলা গলা থেকে,লেবু ছাড়াই তন্বী আলো হয়ে ঢুকে পড়বে না... ' আরে কাচ্চা-কাচ্চা ছোটা ছোটা নিম্বুরা লাইদো' সুইট সিক্সটি...  কোল্ড শোল্ডারড,ঘন কুয়াশা রঙেওই যে আঁশটে  কালারের, বোন খোঁচা মারে চিবুক গলার কাছে রাখলেই!মাধুর্যের রকমফের তোমার আঙুল ছেড়ে তবু দেবে না।  না-লিখলে, আমি,- নীতিরীতি শীৎকার কদাপি থামাবে না। থামাবেই বা কেনকী দায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর যন্ত্রণাগুলো 'ভদ্রলোকের এককথা' বা  অন্যান্য নীরোগ দেহের মতো নির্দিষ্ট সাইজেও থেমে যাবে না।  যা আদৌ ঘটেনি, তাও নতুনভাবে কিছুতেই ঘটবে না। না-লিখলে, আমিপেডোফিলিসরা 'জয়জয়ন্তী' গাইবে না। ওই যেআমার যা যা করতে হয়, তা তাও না-করলে হবে না। উলটো দিকের ছাদ থেকে এসে কোনো অশরীর, আমার  আশরীর চেটে সামনে আয়না ধরবে না। না-লিখলে, আমি না-লিখলে  পিতা আর প্রেমিক বানানে ভুল থাকবে না...
তাই সমস্ত না-লেখাসমস্ত কথাহীনতা তোমার কাছেই গচ্ছিত থাক
পিতা আর প্রেমিক বানানে ভুল হোক আমি চাই না
.
যে দু-চারটে পাতা অনায়াস হয়ে উড়ছিল আর টপ্পা গাইছিল, সেসব পাতাদের  বকুল-হার  পরাবো বলে, আমার রাতগুলো সব  বেল্টের ঘাট হল!
ত্রিকোণ বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসছিল   ভেতরের খুঁটিনাটি
পুতুল বৌদির যন্ত্রণা সুখ হয়ে যাচ্ছিল, ফিসফাস সাঁতরে আসছিল
নোটেশন ডিজাইনের আধুনিক গ্রিল থেকে
ততক্ষণে বেকড যাবতীয়
মাইক্রোওয়েভ থেকে থিকিথিকি উত্তাপ শাওয়ারের নীচে। ধারাস্নান আয়না দেখে
অবশেষে  ঘাট খুললো। রাতের গড়ন  বকুল হল।
টপ্পা মিশ্র-খাম্বাজে মূর্তি হল। এরপর আর  সেই পাতাদের গান কখনও শোনা যায়নি
অনির্দেশে যাওয়া কিছু পাখির  দল একই জায়গায় এসে থেমে গেল
শুনেছিলাম একটা স্বাক্ষর এরা প্রত্যেকেইই করেছিল
গম-বাগানের পুবালি হাওয়া নিরুত্তর লেখে
সমস্ত, সমস্ত সরল বক্রপথ ধরে মাইলের পর মাইল ---
ফলকের পর ফলক পেরিয়েছি, কিন্তু খুঁজে পাইনি আর সেসব অনায়াস আর গান...
গাছগুলোতে ঝুলছে  ছায়া আর ইশতিহার-----শতাব্দী পেরোনো 'সন্ধান চাই'
নাহ, গান ফেরেনি আর
আজ হঠাৎ  সহস্র পাখোয়াজ বাজতেই চমকে উঠি
ত্রিকোণ বারান্দায় পুতুল বৌদির সাথে লক্ষাধিক আমি বেরিয়ে আসতেই দেখি পৃথিবীটা আস্ত বকুল বাগানে ভরে আছে...
ফুলগুলোর মুখের গড়ন হুবহু গানের মতো...
পুতুল বৌদি খোলা চুলের  ঝাপটায় বকুল বাগানে কী - একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে
বাঁকা-হাসি নিয়ে একছুটে ভেতরে গেল
উত্তরের পেছনে পেছনে একঝাঁক প্রশ্নও ছুটছিল
পুতুলবৌদির গলা উড়ে যাচ্ছে গান হয়ে
বাকিটুকু শুধুই সুখ...
.
যেখানে যত পাপ ছিল, শাপ ছিল উপড়ে গেলো।  গিলতে না-জানলে আগুন বৃহন্নলা হয়ে সামনে দাঁড়িয়েকাব্যনাট্য শেখাবে, এগিয়ে দেবে রুমাল শোক...
.
জল জেনেছিল সোহাগি চাঁদ পুড়ে ছাড়খার হয় ঠিক কত ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ভাড়াটে রাত তখন আটহাত তোষক
গুছিয়ে রাখে। লাল বেলপাতায় 'টি কাজলকথা।  গল্প হল অন্য দূরবর্তী কবিতা। কবি কবি, গান কবি তখন হুকোর গড়্গড়ে।  অস্ফুট একটা  ভেসে যাওয়া।  এসে যাওয়া আর ভেসে যাওয়ার ভেতর যে-দুটো চোখ বুজে থাকে,তাকে 'সংজ্ঞা ' হতে দেখেছিলাম,যার ডাকনাম নাকি মিশে যাওয়া! জল পুড়ছে। আগুনও। ঠান্ডাঘরে ভগ্নাংশ লিখে রাখছে অষ্টাদশী তারা এবং তারা।গড়্গড় ধোঁয়া জড়িয়ে-মরিয়ে আকাশ হচ্ছে। চাঁদ পুড়ছে, ক্রমশ পুড়ছে তীক্ষ্ণ শীত..
.
আমি প্রথম হেরেছিলাম সেদিন
যেদিন করমচার গন্ধ ছড়ানো দুপুর
চিঠি হয়ে উপড়ে নিয়েছিল আমার চোখ...
আমি প্রথম হেরেছিলাম সেদিন
যেদিন থেকে প্রথম হাঁড়ির ভাত গুনতে গুনতে
আলোর হিজাবে পুষছিলাম একটা অস্ত্র...
প্রথম হেরেছিলাম সেদিনও
যেদিন  নেপাল স্যারের কাছে পড়ে ফিরতি পথে
তোর চোখে জল আর সাইকেলের সামনের চাকাটা দেখেছিলাম প্রথম!
ছত্রিশ পাতায় আমার মানচিত্র থমকে যায়
হামেশা দেখি জোনাকির কারুকাজ আর বিষণ্ণ কুড়ির স্নান...
আমি হেরে যাই, আমি হেরে যাই
আমি প্রথম হেরেছিলাম সেদিন
আমি রোজ হারি সেদিন, যেদিন আয়নায় দেখি নিজেকে
কুয়াশারর মত সংশয় জমে কন্সিলারে
আমি বুলিয়ে নিই আটচল্লিশ পাতার পর
অসংখ্য দাগ লিখে যায় ঘোর পরবাস অথবা...
অথবার পর যেটুকু থেকে যায় সেখানেই লেখা থাকে
পরাজিত জোছনাকথা আর বিমূর্ত কিছু  জলজন্ম
.
সে-মুখ তোমার!
যে-মুখ ছলের বাধ্যতার ট্যাটু আমার পিঠে আঁকে না
যে - মুখ শাশ্বত ছাইয়ের ভেতর বাড়িয়ে দেয় ভণিতাহীন ডানা
যে-মুখ আমার সারা পৃথিবীর সমস্ত প্রেমের মধ্যে আমাকে বাঁচিয়ে রাখে,রাখতে চায় এক-একটি নিবিড় জন্মের মতো....
আসলে, প্রখর পুরুষ একটা স্বপ্নের মত
শুদ্ধ সঙ্গীতের মত!
সেখানে বাধ্যতা,বোকামি,ফাঁস কোনোটাই নেই
অহেতুক 'বোকা'সাজার জারিজুরি নেই!
আসলে বোকা সাজতে সাজতে আমরা কখন যে সত্যিকারেই বোকা হয়ে যাই,
নিজেরাও জানি না!
আবারও খুঁজে পেয়েছি, নিয়মিত মুখোশ
বিশুদ্ধ অনিয়মিত বিছানা
আর  বিবশ চাঁদের গন্ধ


1 comment:

  1. আমি পড়বো। লিনক সেভ করলাম

    ReplyDelete

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...