Friday 26 January 2018

অরুণিমা চৌধুরী





আত্মজ 

সে আমাকে ডাকে, সে আমাকে তীব্র ঠেলে দেয় 
গভীর বিষাদে

দীর্ঘ বছর পরে দীর্ঘ রাতের মতো দিন
আমিও অন্ধ হয়ে থাকি...

আর এই অজস্র রাত, হাত খুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে মুঠোভরতি সবটা বিশ্বাস 

মুহূর্তে ফুরিয়ে গেলো কচি মুঠো
আহা শাঁস! দুধের গন্ধ!
আর শ্বাস! বন্ধ হয়ে আসে

ফুরনো আঁচল নত বৃন্তমুখ টুপটাপ ঝরে যাচ্ছে দুধেল ভরণ....





তোমাকে ফিরিয়ে দেবার পর

আয়ুরেখা যদি নদী ধরো
তা থেকে অধিক কিছু জল প্রতিচ্ছবি জুড়ে টলমল নাও, সব নাও,     মুহূর্ত বাষ্প চোখ ত্বক
যেখানে যেটুকু জেগে আছ, নিয়ে ফিরে যাও

তোমাকে ফিরিয়ে দেবার পর অস্ফুটে আমার ছায়া বলেছিল 'ভালবাসি'
ডানাহীন চোখদুটো জুড়ে একটা নিষিদ্ধ চুমু
নামহীন নিষ্প্রাণবলেছিল, 'ফিরে এসো'

এখন মুহূর্তগুলো স্পর্শরহিত
কাঠের ঘোড়ার মতো যান্ত্রিক দোলে
তুমি নেই বলে আয়নাও প্রতিচ্ছবি অস্বীকার করে
কত যোজন পথ উড়ে এসে নিজেকে
অসম্পূর্ণ দেখি

ভালবাসা অলীক আশ্চর্য নদী
চুপ থাকা সমীচীন জেনে
দাঁতে জিভ কেটে নিজেকে সম্পর্করহিত করেছি..



দূরত্ব

এক একটা অন্ধকারের আয়ু
                 
দুশো দশ আলোকবর্ষ।

 
দূরত্ব মানে দুটো স্বচ্ছ কান,
         
আশ্চর্য, জটিলতাবিহীন,
কতকটা স্ফটিকের মতো

      
অথচ সমস্ত সমান্তরাল পথে
শব্দগুলো ঠোঁট থেকে ঝরে পড়ে
          
বিন্দু বিন্দু বরফের মতো,

সমস্ত প্রমাণ লুপ্ত হলে, কথারা বাসি হয়
        
ঠিক মাত্র পাঁচ মাস পনেরো দিনেই।



মনোরোগীর ডায়েরী

ঠিক এইখানে এসে ভেঙে গেছে প্রেমিকের মুখ
সুস্থ ব্রেনসেল

শান্ত করিডোর বেয়ে  হেঁটে আসে অ্যাপ্রনের   ছদ্মবেশে ঘুম

ঠিক এইখানে প্রতিদিন নিয়ম করে  চামড়া ফুঁড়ে  ঢেলে দেয় বিস্মরণ আর শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
তোমাকে হাতড়ে ফেরা দড়িবাঁধা হাতেরা
চোখ  নাক কুঁচকে যাওয়া হৃদপিন্ড

তারা ঘুমোলেই  আরো কিছু জঞ্জাল চাদরে
দালানে ছড়িয়ে যায়
  
কাকেরা খুঁটে খায় বিন্দু বিন্দু ঘিলু
কেউ কেউ আচারে ডুবিয়ে তোমার  বিমূর্ত  তৈলচিত্র আঁকে

সমুদ্র রক্ত হারানো প্রেমিকের মুখ এক মনে হলে
আমি ক্রমশ ডুবে যাই  বিশ্বাসযোগ্য
অবিশ্বাসের জলে 
আছাড়ি পিছাড়ি স্মৃতিবিন্দু মস্তিষ্ক ফাটিয়ে ছিটকে আসে লবণাক্ত  রক্তস্রোতে
মরে যায় আমার কবিসত্তা..তোমাকে ভুলে যাই আর ওরা, এমনকি তুমিও বলে ওঠো
ধীরেধীরে সেরে উঠছি আমি


ঠিক এইখানে, ঠিক এইখানে ফুরোনো বিকেল ট্রেভর্তি স্বপ্নহীন শুশ্রূষা নিয়ে এলে
তোমাকে প্রতিবার খুনি মনে হয়

     
কারা যেন সুস্থসদনের দরজায় লিখে যায়
    
প্রেমহীন পৃথিবীর পথ এইখানে
ঠিক এইখানে থেমে গেছে


No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...