Thursday 25 January 2018

কামরুল ইসলাম





একগুচ্ছ কবিতা


অবৈতনিক  নিমপাতার সংগীত

জন্মদিনে ঢুকে যায় বাসন্তী অপেরার ছুকরিদের
পেইন্টেড অবয়ব কিংবা তাদের ফেলে যাওয়া
সামান্য  অপেক্ষাবজ্রপাতের নিচে লিয়রের হাড়ের কম্পন
কিংবা মরচে-ধরা গেরাপির ফলায় ফলায়
জমে থাকা জলপাখির বহুমাত্রিক মলমূত্র, ক্রীড়া

জীবনের ডালপালা উঁচিয়ে যেটুকু দেখা যায়
সবটুকুই টানাটানির দিন, তার তলে
চিকিৎসাশাস্ত্রের  অনিদ্র জঙ্গল
দহনেদ্বিধায়-

কিছু কিছু অচিকিৎস্য সন-তারিখের খাঁচায়
শীতের বিকেলের সরল দো-তারা বেজে উঠলে
অসুখের গোপন জানালায় ঘাসফড়িংয়ের ডানা থেকে
নেমে আসে অবৈতনিক  নিমপাতার সংগীত

ধূসর কাঁকড়াদিন

কাঁকড়া ভরা ছোট এক বিলের ছায়া হৃদয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যায়
আর তুমি দূর থেকে দেখে দেখে হাসো
ঘাসপাখির চরম দুর্দিনের ইমোজি-চরের রোদে ফুটে থাকা কত সব ন্যাংটো ফুল
এরই মধ্যে কাঁকড়ার খোলস ভরা বালির মমতায বেড়ে ওঠা ঘাসের মধ্যে
প্রাচীন সমুদ্রের ঢেউ-

অতঃপর মেঘ জমে দক্ষিণে-বামে- নির্জন বিলের ছায়ায় ঝড় ওঠে
কাঁকড়া তার গর্তের ভেতরে গড়ে তোলে স্বরাজ (একাকী মানুষের আকাশ)
জলজ আঁধারে ঘুমোয়, প্রজাদের চিঠি লেখে, নেশায় চুর হযে কখনো
গোপন রাস্তায টাঙিয়ে রাখে অশেষ ক্যাারিশমায় ভরা কঠিন সময়ের নীরবতা

এইসব ধূসর কাঁকড়াদিন গাছে গাছে ওড়ে- জলে জলে ভেসে যায় উন্মাদ
শ্রাবণের ভেলা-


সীমাহীন বর্ষার রাতে

সংগীতের উপোল তেপায়ায় দুলছে রাত
গৃহিণীর চোখে-মুখে উদ্বাস্তু হাওয়ার ঝাপটা
গাছেরা কিছু মায়া তুলে ডাকছে দূরে-

জঙ্গলের সন্দেহ চোখে বাড়ি ফিরছে ক্লান্ত কোকিলের
পুরনো কুহু
সহস্র লতার শুভেচ্ছা মাখা এই সংগীতের নিচে দাঁড়িয়ে
আমরা দেখতে থাকি হাড়মিস্ত্রির সান্ধ্য কবর

পথ তুমি কেবলই ইশারা- একথা মনে রেখে
আমার উনুনে আমি লুকিয়ে রাখি আমারই ডানা
একদিন সীমাহীন বর্ষার রাতে দেখবো তা খুলে

 বিদূষী পাখির কেরাত

চারপাশে যখন ধানের মতো ঢেউ খেলে যায়
জঙ্গলে আটকে যাওয়া দু-একটি বিকেল
বাতাসের চিবুক চুঁইয়ে মর্সিয়া গায়, যখন তালগাছে
লেগে থাকা গত বছরের বৃষ্টির মহড়া
সামান্য হাসির দিনে ফিরে না আর, যখন বাবুইযের
ঠোঁট থেকে ঝরে পড়ে আকণ্ঠ শিল্প-আঁচড়

তখন কোনো বিদূষী পাখির কেরাতের দিকে
নবান্নের গান ভেসে আসে, আর পাড়ায় পাড়ায়
হেমন্ত সন্ধ্যায় পাখিদের খুঁটে খাওয়া দৃশ্যের কথা
ভাবতে থাকে সান্ধ্য মানুষের ডোরাকাটা মুখ-

সন্ধ্যা এখন লেবুপাতার প্রশ্রয়ে জোছনা তুষারের যৌথ মহড়া


লাল মাটির কবিতা

লাল মাটির কবিতা তোমার পছন্দ ছিল-
তুমি জানতে আলোর ভেতরে কীরকম যন্ত্রণা
ঢেউ খেলে লাল ইস্পাতের বল হয়ে যায়, আর
বুড়ো কচ্ছপের সাঁতার নিযে কীভাবে জলজ কেতাবের
পৃষ্ঠাগুলো নিজেদের গুঁটিয়ে নিতে থাকে-

তুমি বৃষ্টিতে ধুয়ে দিতে চেয়েছিলে মৃত্যু কফিনের
যৌথ সংসার, আর পাড়ার কিন্নরতলায় গান কুড়োতে কুড়োতে
জেনে গেলে বিরামহীন দৃশ্য লঙ্ঘনের ইতিহাস-

লাল মাটির কবিতা তোমার পছন্দ ছিল-
লাল ভাতের গদ্যের ভেতরে সাঁতার কেটে কেটে
একদিন তুমি জেনে গেলে লালপেড়ে শাড়ির আঁচলে
আলোরা কীভাবে অন্ধকারে ডুবে ডুবে জল খায়, আর
পাশের বাড়ির অন্ধ লোকটি আধখানা মেঘ কাঁধে
ভেঙে যায় সবগুলো পুরনো দেয়াল-

ব্যক্তিগত জমানো মন্ত্রপুস্তিকার পাতাগুলো

ব্যক্তিগত ওড়াউড়ি নিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি শহরের শেষ মাথার উড়ন্ত পানশালায়
সেখানে এক অন্ধ কসাই আর এক বেহালাবাদক ওয়াইন অন্ধকার গিলছে সমানে
আর চারদিকে মাংস-হারানো গরু-মহিষের দল গোল্লাছুটের মহড়ায় যে যার মতো
শান-দেওয়া ছুরির দিকে প্রণত-
পানশালার দেয়ালে টাঙানো বিখ্যাত মাতালদের ছবির ভেতর আমাদের ব্যক্তিগত
জমানো মন্ত্রপুস্তিকার পাতাগুলো বেলফুলের গন্ধসহ ঢুকে যায়, আমরা তখন
বেহালাবাদকের শেষরাতের ঘুমের ছায়ায় বেলগাছের নিজস্ব সংগীত
বিছিয়ে মনে করতে থাকি তুমুল বৃষ্টির ভেতর হেঁটে যাওয়া
মন-বালিকার জল-ধোয়া মুখ

 রূপের টোটেম

ঝোঁপের আড়ালে পড়ে আছে রূপের টোটেম
ডালে ডালে ঘাম ঝরে শুকনো পাতার, আর তুমি
ছায়াবিষ পথে ফেলে মেখে নাও বকুলের ঘ্রাণ

দূরে, বাতাসের স্মৃতি আমলকির ডালে এসে বসে-
উৎসব ভুলে যারা উঠছে পাহাড়ে
তারা কি জানে কীরকম সাঁতার হলে দিগন্ত কাঁপে
দিঘির চারপাশে নেমে আসে মৌসুমী ঝড়?

উৎরানো সন্ধ্যায়
রূপের কাহারবায় গাছে গাছে বেজে ওঠে পাখি
জ্বলে ওঠে কিশোরী কোকিলের সঙ্গম স্বর-


No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...