Friday 26 January 2018

কৌশিক গুপ্ত



গুচ্ছ কবিতা




বিমুখ

হাতের লেখার আন্তরিকতা ফিরিয়ে দেবে কাগজ
উদাসীনতার ছাপ ফেলে উড়ে যাওয়া কতই স্বাভাবিক
শব্দখরচ অবান্তর জেনে পেপারওয়েট সংস্রব সরানো থাক
একটু দূর থেকে লক্ষ্য রাখো টেবিলের দিকে
ফেড-আউট হবার পর সেখানে হারানোর নিঝুম সকাল
বেড়ালের ভঙ্গিতে এসে শুয়ে পড়বে ঠিক একদিন

বাড়িবদলের অবসরগুলো শুধু হাতে থেকে যায়
পরোক্ষে বুনে দেয়া পাখার হাওয়ার মধ্যেও
নিষ্কম্প প্রদীপশিখার আকরিক অযত্নবিভা
ভাঁজে ভাঁজে সেই আলো দেখিয়ে আনতে পারে যদি
অন্ধকার রাস্তা ধরে নিজে থেকে চিনতে পারলে পারুক
দেরাজ টানার শব্দই বলে দেবে সে আছে কিনা
তবু জানলার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেখো না একবারও



দ্ব্যর্থক


সর্বস্বরভুক হাওয়া তৃতীয় মুখের কথা আটকে গলায়
থমকে রয়েছে ঘরে বহুক্ষণ, কোন্‌ অর্থে কাঁকরের ভাষা
দাবির অব্যয় হয়ে ঠেকে গেল তার কাছে? শাঁখের করাত
সত্যি নাকি সে-ও শুধু উদ্দেশ্যপ্রবণ? আজ সমতুল্য ভার
খুঁজে দেখা গৌণ লাগে, উদ্বিগ্ন জলের স্ফীতি নিকটস্থ তীরে
অকৃপণ ছলছল করে ভিজে মাটি পেয়ে, নুড়িপাথরেরা
এতদিনকার সব বিঁধে থাকা বকলমে নিয়ে চলে যায়
আঙুল আলগা করি, দূর্বাঘাস ছোঁয়া জ্বোরো কপালের পাশে
চুড়ির শব্দের ঘোর, অনিঃশেষ জন্মগুলি ভগ্নাংশ ছায়ায়
তরণী ভিড়িয়ে রাখে, অবশিষ্ট স্নেহরূপ চুম্বনলিরিকে
ফিরতি জবাবী গান বেঁধে নেয়, কাছাকাছি আসা দুটি হাত
তাপিত স্বাক্ষর দিয়ে এবার মিলিয়ে নেবে কাটাকুটি ছেনে
সর্বস্বরভুক হাওয়া কতখানি গিলে নিতে পারেনি সেকথা --
আমার সঙ্করায়ণে শতকরা পরিমাপ ভুল হবে তবু
দ্ব্যর্থকে মিশেছে সীমা, বিমূর্ত সজীবে জাগে ভাস্কর্য তোমার



খোলা কাচ

অতিরিক্ত-র কাছে নিশ্চয়তার খেই হারিয়েছে শীতকাতুরে
পছন্দসই খোঁজার অতলে কাশেম হয়ে ঢুকে পড়ছ
জহরতের গুহায়, স্বল্পতার সূত্রে বোনা পদার্থবিজ্ঞান
পাতলা একটা শালের ধরাছোঁয়ায় চুপ রেখেছে নিবারণ
পশম আর শরীরের অন্তরিত বায়ুস্তরে
সাবলীল বোঝাপড়া আগে থেকে অদৃশ্য কালিতে
লিখে রেখেছে প্লট, বাকি শুধু আগুনের ধারে মেলে ধরা
মেগাসিরিয়াল বন্ধ করলে সেখানেই শুনতে পাবে
সাদা হয়ে যাওয়া কুমায়ুনের ভোরে ওদের সংলাপ
পাইনের মর্মরে অভিজ্ঞ লাগে, পড়ে থাকে লেপ-কম্বল সব
'অতি' আর 'রিক্ত'-র মাঝে স্পেস প্রকট হয় এত গাঢ়তায়
জানলার একটা কাচ খোলা রয়েছে কোথাও
তীক্ষ্ণ ঠান্ডা হাওয়া প্রবল বেগে ঢুকতে থাকে সারারাত



যৌগ

যেভাবে রাতকে ভাঙো যোগিনীমুদ্রার প্রত্ন দেয়াল-লিখনে
শুকনো ব্রণ-র দাগে নিশ্চয়তা জমা রেখে শবসাধনায়
সেসব গ্রেস্কেলে আমি বিকল্প টুকরো তুলে নিজেকে জুড়েছি
জেব্রা ক্রসিঙের ক্রমে গড়ানো প্রবাল তাকে ডিঙোয় নিয়ত
অন্ধকার চুমুকের নীট পেগ চলকানো বেয়াড়া উদ্‌গার
হাঁপানির টান নিয়ে শ্বেত লার্ভা বেছে এনে টুনিবাল্ব জ্বালে
তলানি প্রহরে সাঁটা রোগাটে প্রচ্ছায়া তাই ভুলতে দেয় না
যুগ্মভাষ একাকীর ন হন্যতে সর্বশেষ নাছোড় অভেদ
ব্র্যাকেট বদল হয় ক্লিশে উৎপাদকে, পাস বাড়িয়ে বাড়িয়ে
ঠেলে নিয়ে যাই তাকে, প্লুতস্বরে ছিটেফোঁটা এগারোর ফাঁকি

পলিক্রম্যাটিকে বৃথা অনুবাদ করতে চেয়ো না এদেরকে
হিমবাহে গলা মোমে যৌগিকতা নিয়ে থাকা রঙের কোথাও
ফেরার প্যাটার্ন নেই, গতিশীল ফিল্মস্ট্রিপে ছাপ ফেলে যাবে
ক্ষণিক আবহ শুধু, ব্ল্যাঙ্ক কলে পথভ্রষ্ট হর্ণ, ধাক্কা খাওয়া
ফাটা বুদবুদে মৃত ক্রিং সাইকেলে আর ট্রামে টানা তারে
পলকে তড়িদাহত চড়ুইয়ের খিন্ন ডাক প্রবল ঘণ্টায়
বিপন্নতা আঁকড়ায়, পোড়া ডানা থেকে ঝরা সেই সাদা কালো
পালক সারাশরীর আচ্ছাদিত করে ফেলে, ভিড়ে সরে পড়া
বর্ণগুলি ঘাই মারে, তখন সঙ্করায়ণে শরিক পোকারা
খেয়োখেয়ি করে এসে শববিয়োজনে কার দু'আনা চারানা
মাটির পাঁজরে মিশে বর্ণান্ধ গাছেরা হয়ে ওঠে জাতিস্মর

গিরগিটি প্রতিদিন কুঠি বদলায়, অনুকম্পা চোখে তার

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...