সমুদ্রের কবিতা
[ঋণ : উৎপলকুমার বসু]
সমুদ্র থেকে ফিরে এসে আমি প্রতিবার আঁশটে-ঢেউ লিখতে চেয়েছি
কিন্তু, বারবার তরঙ্গগুলি কাগজে আছড়ে পড়েছে অবিকল মৃত্যুর মতো
কল্লোলের সঙ্গে যে মৃত্যুর অন্ত্যমিল দেওয়া যায় না, তা নয়
তবু, আমরা তো ঢেউ ও তার উত্থানপতনে চিরদিন যৌনতাই লিখেছি
কিন্তু, আপনার সাগরকাব্য বরাবরই আলাদা, বিদায়ের মতো কুহকী
আপনি সমুদ্রের নীলিমাবিথারে, সমুদ্রমন্দিরে দূরবীক্ষণের সঙ্গে
অনবদ্য আলাপচারিতা চালিয়েছিলেন সেই নিরুপায় বালিয়াড়িতে
আর, সিআইটি-রোডে আপনাকে দেখেছি সমুদ্রসফেন পেরিয়ে
ঢোলা-পায়জামা আর ফতুয়ার বেশে একটি নিপাট-পাঁইট কিনে
ফের রাস্তা পেরিয়ে শ্রমণের মতো শান্তভাবে গাড়িতে উঠে যেতে
গাড়িতে বসে পাঁইটবেষ্টিত খবরকাগজের ছিন্ন-বাক্যগুলি লক্ষ করে
অঘ্রানের সন্ধেবেলা আপনি আবার সেই তেষট্টির নিরক্ষর বেশ্যাদের
পত্রাবলি-মুসাবিদা সেরে নিতেন মনে-মনে, আর সেইসব বাক্যাতীত
সারাৎসারের ভিতরে গড়িয়ে আসত সাদাকালো ঢেউ বা ফেনারাশি
কফিহাউসের টেবিলে আপনার ঠোঁটে লেগে থাকত অবিমিশ্র-কফির মতো
একটি প্রসন্ন হাস্যরেখা, অধিকাংশ বিকেলবেলা পাদ্রিরা এমন হাসেন
(আমি লক্ষ করেছি, গোধূলিপীড়িত দূর-শহরের সচরাচর কবরখানায়)
বিপরীতে পার্থপ্রতিমের ঠোঁটে দেখেছি দুরূহ-জ্যোতিষীর রহস্যবিন্যাস
কে আরিস্ততল আর কে প্লেতো, আমরা তা বুঝে উঠিনি কোনওদিনই
আমি, উৎপলদা, সারাটা সন্ধ্যা টেবিলে বসে আপনার ঢেউ ভাবতাম
আপনি নিশ্চয়ই গতজন্মে কোনও প্রশান্ত-নুলিয়া ছিলেন, অথবা ধীবর
না-হলে আপনার বই খুললেই এত ঢেউ আছড়ে পড়ে,বালি ওড়ে,আজও!
No comments:
Post a Comment