Saturday 27 January 2018

দু-একটি প্রিয় কবিতা



উৎপলকুমার বসু-র কবিতা


পুরী সিরিজ এর শেষ কবিতা


তারপর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে তোমার ব্যক্তিগত বসন্ত দিনের চটি। এবং
আকাশ আজ দেবতার ছেলেমেয়েদের নীল শার্ট পাজামার মতো বাস্তবিক।
একা ময়ুর ঘুরছে খালি দোতলায়। ঐ ঘরে সজল থাকতো। ওরা ধান কল পার হয়ে চলে গেছে।
এবার বসন্ত আসছে সম্ভাবনাহীন পাহাড়ে জঙ্গলে এবার বসন্ত আসছে
পতিশ্রুতিহীণ নদীর খাঁড়ির ভিতরে নেমে দুজন মানুষ তামা ও অভ্র খুঁজছে।
তোমার ব্যাক্তিগত বসন্তদিনের চটি হারিয়েছ বাদামপাহাড়ে।
আমার ব্যাক্তিগত লিখনভঙ্গিমা আমি হারিয়েছি বাদামপাহাড়ে।







পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল-এর কবিতা

আত্মকথন



চলিত ক্রিয়াপদের বাংলা আর লিখিতে ইচ্ছা হয় না। এই বাংলা বড়ো সাহিত্যিক। যদিও আমার বয়স ত্রিশ বৎসর ও ২মাস পূর্ণ হইয়াছে এবং এক্ষণে আমি রবিবারের মধ্যাহ্নে, ত্রিতলে, খাটে বসিয়া আছি, চারিদিক বেশ শান্ত, একটি কাক ডাকিতেছে—কেমন ধারণা হইতেছে যে ইহার মধ্যেই মিশিয়া আছে আমারই মরণোন্মুখতা। কোনো-না কোনো একটি সত্য বলিতে ইচ্ছা করিতেছে। আমার ব্যক্তিগত সত্য। জীবন এপর্যন্ত যতোটা যাপিত হইয়াছে, তাহার তথ্য ও চিত্রের ভিত্তিতে কিন্তু এই সত্য প্রস্তুত নয়। কেবলি মনে হইতেছে আঁটপুর বা ঐরকম কোনো একটা গ্রামের বাড়িতে বসিয়া থাকিতে পারিলে বিলক্ষণ শান্তি হইত। না, যে থাকিত সে কোনো ত্রিশবয়সী লোক নয়। তাহার বয়স কোনোমতেই সতেরোর বেশি হইবে না। সে ধুতি ও হাতকাটা গেঞ্জি পরিবে। এখন নির্জন দুপুর, কলাঝাড় পার হইয়া সে জামের বনে যাইতেছে। সেখানে কি একটি বালিকা থাকিবে না, যে তাহাকে আঁকাবাঁকা হরফে বহু সাধ্যসাধনায় একটি চিঠি দিয়াছে কিছুদিন আগে—‘কেমন আছ। আমার প্রণাম নিবে।’ তাহার মুখ ও হাবভাবের বর্ণনা, আমি, ওই সতেরো বছরের হাতকাটা গেঞ্জি ও ধুতি পরা যুবা, দিতে মনস্থ করিতেছি না; শুধু পাঠকের সঙ্গে কথা বলিতে ভাল লাগে তাই বলিব, তাহার নাম পূর্ণশশী। কতবার ভাবিয়াছি—ঐ তো সে এখনো ভাবিতেছে আজ হয়তো তাহার হাত তাহার বশ মানিবে না, আলিঙ্গন করিবে; আজ হয়তো তাহার মুখ চুম্বনে চুম্বনে পূর্ণশশীকে জানাইয়া দিবে সে ডাগর হইয়াছে, সে শহরে গিয়া জানিয়াছে; কিন্তু ঐ তাহাকে দেখা যায়, পূর্ণশশীর হাত হইতে জাম খাইতেছে যেভাবে পোষা ঘোড়ায় মানুষের নিকট হইতে দানা খায়, শুধু একটি করতল পূর্ণশশীর পদমূলে। জামবনে হাওয়া অতি ধীরে বহিতেছে। পাঠক, আপনাকে ভগবান জানিয়া বলিতেছি, আমি এ-ই। 



প্রবীর দাশগুপ্তের কবিতা

পিন্তানিনা সান্তামারি

নাও না আমাকে নাও
বাতাবির ফল প’ড়ে-থাকা মাঠ,নেবে না আমাকে?
আমার তো দেশ নেই ঘর ও বাড়ির মতো কিছু নেই শুধু
ঘোড়ার মাংস বেচে তিনটি মোহর পাই রোজ ভোরবেলা
তখন দিনের শুরু- এককালে খনি ছিল গভ্ ভ ফুঁড়ে
জেগে ওঠা জল- পাথরে কামিজ রেখে, ইজের শুদ্ধু খুলে
কতক্ষণ ডুবে থাকি তারপর সেরে উঠে দেখি যে আলোর বন্যা
নীল আলপিন কাঁধে প্রথম চাষীরা যাচ্ছে পুবের জমিতে
রাত্তিরের ভুতো ভয়,সাপখোপ,হিশিমাখা বিছানার
সংস্রব ত্যাগ করে একটি খুকুও জাগল,
চোখের পিচুটি ধুয়ে এইবার স্কুলে যাবে-
ওদিকে কাঁকর রাস্তা টেনিসের কোর্ট পাশে ফেলে
একটি সাইকেল আসছে,সামনে জোতা পাঁউরুটির ভ্যান
আর আসছে পোস্টম্যান,হাতের তালুতে তার চিঠি নয়,
এক সেণ্ট মাত্র দাম ব্রিটিশ গায়নার সেই মহামূল্য স্ট্যাম্প
কিন্তু কাঁদছে সে

কিছু না হারিয়ে তুমি কাউকে কিচ্ছু দেবে
সেও খুব ভুল দেওয়া
এ-রকম ভুল থেকে উদ্ধারের উপায় হিসেবে
রেটিনার পাত্রব্যাপী লোহা ও তামাক মেশা জল
যথাযথ যেতে চেয়ে যে-মানুষ চ’লে যায়
ভিন্ন শহরে গ্রামে,ঘাসের উপরে তার
মশলার ট্রাক থেকে ঝুঁকে দেখে ড্রাইভার
পিঁপড়ের নিয়মিত গতি আর সে-অলসলোকে
না-জানি ফুলের নৌকা বেয়ে আসে কোন ওফেলিয়া
তুলে নেয় পিন্তানিনা সান্তামারি জাহাজের নাবিকের শব
তখন তো-তখন তো দুপুরের ভীষণ সূর্যের নিচে
যতদূর চোখ চলে ততদূর লাটে তুলে দিয়ে
আমিও হেলায় ছুঁড়ি পর্যটক পাখিদের ডিম
পিজারোর বাহিনীর সাথে এই দেশে এসে
সমস্ত হত্যার সাক্ষী,আমিই আদেশদাতা
পিতৃনাম বালভার্দি,পেশায় যাজক
যদিও প্রাচীন ধর্মে,লোকাচারে,নদী গুহা পাথরের
পুজোর বেদিতে আর রাঙা চোখে-চোখে উন্মাদ সমুদ্রগাথা
এই-সে খানকি মাগি,কর্ষণ চিহ্ণের কাছে
ইনকা লাঙলখানি জেগে আছে জেগেছে প্রমেহ রোগ
শ্বেতপ্রদরের মতো মানুষের ধাতু-দিগ্বিজয়
এবং হে ক্যারাভান আমার কেচ্ছাগুলি
সর্বত্র-ই র’টে গেছে, জেনেছে প্রকৃত বন্ধু
বন্ধুর পরিজন- এইরূপে বিশ্বময়
দড়ির গিঁটের লিপি সমূহ নাবিক চিঠি আর নীল কবিতার
সানুদেশে, রুটির পুঁটুলি নিয়ে চ’লে গেল চাষীদের ছেলে
পায়ের আঙুলে গেঁথে উঠছে গমের বীজ,
ইঁদুরের ত্রস্ত দৌড়, দ্রুত সন্ধে নেমে এসে
এই দৃশ্য ঢেকে দিলে, এবার আক্রোশবশে
চাষীর ছেলেটি হ’য়ে অন্ধকারে দিদিমার
খসখসে হাত টেনে নোবো,
কোথাও যাওয়ার কোনো কথা নেই
ভ্রমণ কাহিনীগুলি নেশা
সে-মানুষ চ’লে গেছো ভিন্ন শহরে গ্রামে
আমি তার ফেরার কাহিনী
ওগো ওফেলিয়া
বাতাবির ফল প’ড়ে-থাকা মাঠ, ওগো
আমাকে নেবে না? 






3 comments:

  1. সত্যিই মণিরত্ন

    ReplyDelete
  2. কিছুদিন থেকেই পিন্তানিনার লাইনগুলো মনে পড়ছিলো! পেয়ে গেলাম।

    ReplyDelete
  3. কবিতাটি পড়ে ভালো লাগলো।

    ReplyDelete

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...