Saturday 27 January 2018

কৌশিক বাজারী







কুশল জানিও, ইতি




তোমার ভেতরে এত গলিঘুঁজি, আমি পথ হারিয়ে ফেলি, জানো! একটা অতি সহজ পথ খুঁজে পেতে এখানে এসে পড়ে এক ধাঁধার ভেতর হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমশ, আর তোমারই আঁচল ধরে উদ্ধার পেতে চাইছি বারংবার! তুমি ভয়ানক অশরীরী আর রহস্যময়ী হয়ে উঠে আমাকে চোখ রাঙাচ্ছ। আমি কি ভয় পাব? বল? আমার কি ভয় পাওয়া উচিত? যদি ভীত হয়ে এই আঁচল ছেড়ে যাই, আর এই গোলোকধাঁধা আমাকে গ্রাস করে, যদি প্রাণপন চিৎকার করে সেই তোমাকেই ডাকি, আর দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে সেই আর্ত ধ্বনি ঝনঝন ভেঙে পড়ে পথের উপর? আমি কি আরো ভয় পেয়ে মিথ্যে বলতে শিখে যাব? মিথ্যের ভেতরে সেই ভয়ংকর অসুখ নিয়ে কোথায় লুকোব? যে জীর্ণ পাতাঝরা শীত আমাকে ভুল বুঝিয়ে ছিল গতবার, যে ক্রমাগত শীর্ণ হতে থাকা সুঁড়িপথ আমাকে হাত ধরে পথ হারাবার পথ বলেছিল, যে অচেনা তারার ফুটে ওঠা আমাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেল বারংবার, তাদের কি জবাবদিহি হবে এখন? এই শেষ প্রান্তটুকু আঁচলের, তাই আর ছাড়তে পারিনা এবয়সে, জানো ত, রক্তের গতি ক্রমশ ফকির হয়ে আসে, তার আলখাল্লা শুধু জেগে থাকতে থাকতে ভেতরের মানুষ মরে কাঠ! তবু তার বাড়ানো হাতের ভিক্ষাপাত্র তোমার পথের ধারে রাখা, বলো, কি কুশল রাখবে সেখানে?





শোনো, তোমাকে যা বলা হয়নি--
আমাদের চেনা জানা সম্পূর্ণ হয়েছে। খননের আর কিছু বাকি নেই তেমন। এইসব ভাবতে ভাবতে সেদিন শেষরাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ভোরবেলা ঘুম ভেঙে তুলে দিল কেউ! যার হাতের হিম-ছোঁয়া এখনো টের পাই, আর কেঁপে উঠি। দেখি তার মাথা গড়িয়ে পড়েছে উঁচু বালিশের থেকে। নাকের হাওয়া নল খুলে গেছে। খুব ধীর বুদবুদ উঠছে জলের গভীর থেকে, যেন এইবার থেমে যাবে, আর থেমেও গেল! আকস্মিক নয়, যেন থেমে যাওয়া লেখা ছিল বহুদিন আগে। আমি শুধু সেই স্থির দেখাটুকু বহন করলাম, করে চলেছি, আর ধীরে সেই অচেনা দুয়ার, ঘর একে একে খুলতে খুলতে চলেছি। তাহলে যে ভাবা গিয়েছিল, আমাদের চেনা জানা সম্পূর্ণ হয়েছে! হয়নি সব! বাকি রয়ে গেছে? ঘরের ভেতরে সেই প্রচ্ছন্ন ঘর, তার আঁধার, অতিক্রম করে যায় রোজ, প্রতিবার তার সেই হিম-ছোঁয়া, করস্পর্শ আমাকে চমকিত করে! আর দেখি, শুধু তাকে নয়, তোমাকেও নয়, আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না কভু! এই নূন্যজীবন, তার প্রতিপদ, কৃষ্ণাচতুর্দশীর মৃদু চাঁদ, তার ভেসে ওঠা শেষ বুদবুদ আর এই পৃথিবীর হাওয়ার ভেতর, সমগ্র জগতের ভেতর তোমার ভেসে ওঠা শ্বাস, সমস্তকে ভালবাসা জানাই। ধন্যবাদ জানাই।

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...