Friday 26 January 2018

ঈশানী বসাক



















অকবিতা




বহুবছর পূর্বে এক রোগীর ব্রেন ডেথ হলে তার পরিবারের অনুমতি নিয়ে তার হৃদয় অন্য এক প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে। দেখা যায় সেই মানুষটি নতুন হৃদয় নিয়ে সুখী নয়। বেঁচে থাকা আর অসুখ নিয়ে বাঁচার মধ্যে একটা নিজস্ব লড়াই চলে আর সেই মানুষটি প্রতিদিন এই দোটানার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়। একদিন সে সেই মৃতমানুষটির কবরের পাশে বসে। মাথা রাখে তার শীতল খালি বুকে। হৃদয়হীন সেই বুকের একটা নিরুত্তাপ মায়া অনুভব করতে করতে বলে আমার হৃদয় দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারণ সে হৃদয় আপনার। এমন ভাবে আমাকে বন্দী করবেন না। আমার বাতিল হৃদয় আমাকে ভালবাসার অধিকার দিতো। কিন্তু এই হৃদযন্র শুধু কৃতজ্ঞ হতে চায়। বিশ্বাস করুন আমি আপনার মতোই হৃদয়হীন। আমাকে আপনার সম্পত্তি ফেরত নিয়ে বিদায়ের অনুমতি দিন। অন্তত কৃতজ্ঞতাময় মৃত্যু চাই না।

কবিতার ফর্ম বা কনটেন্ট নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা নেই একেবারেই। তবে একটা কথা মনে পড়ে গেল । একটা ফর্ম শরীরের মতো। তার মধ্যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থাপন না করলে শুধু শরীর নিয়ে কি বা লাভ? একটি সম্পূর্ণ মনহীন শারীরিক সম্পর্ক যা ক্রয় বিক্রয় বোঝে সেখানেও একটা মানসিক কয়েক মুহূর্তের যোগসূত্র থাকে। তবে খালি খোলস নিয়ে লাভ? একটা সংযোগ, একটা বিষয়, একটা যাপন না থাকলে কি একটা শরীর গড়ে নেওয়া যায়? তাই কনটেন্ট প্রয়োজন। তবে খালি কনটেন্ট দিয়ে কি হবে? শরীর টাও যে চাই। তার ছাঁচ রূপ সব যেন ভিন্নতা পায়। তোমাকে সবার মতো দেখতে হলে হবে ? ভাল লাগবে কী ? নাহ। তাই শরীর হবে সবার থেকে আলাদা। তাই অন্যের হৃদয় বসিয়ে প্রভাব আসতে পারে , কৃতজ্ঞতা আসতে পারে, রক্তক্ষরণ আসে কী? ভালবাসা আসে কি ? ফর্ম আর কনটেন্ট কে লড়াই তে না নামিয়ে তাদের অপরিহার্য বন্ধু বলা যায়, বৈবাহিক সিদ্ধান্ত বলা যায়। তবেই যাপন বসেন কলমে।

একটা শহর বহুদিন পোস্টঅফিসহীন। সংযোগহীন পড়ে থাকে সে। একটা দিনকে পর্দা দিয়ে অসময়ে ঢেকে দাও। পাখিরা ঘুমিয়ে পড়বে। এক সম্পর্কহীন বয়স নিয়ে চলতে চলতে দেখবে আমাদের ছাদ এক। দশক থেকে বেরিয়ে এসে জানি কবি যখন লেখেন তখন তার কোনো সময় নেই, সংযোগ নেই।যত বিচ্ছিন্ন থাকেন তত ই তার আনন্দ ঝরে। চক্ষুদান করেন একটা শরীরকে। তখন ছাই মনে থাকে নাকি তাকে পোস্টঅফিসহীন দুনিয়া থেকে নিয়ে যেতে হবে শহরে। যেখানে সময় , যুগ মাপা হয়। পড়াতে হবে দশক মেপে। দশক তো চিহ্নিত করার কাজ। ও তো গবেষণা স্বার্থে। আমরা তো পড়তে চাই। যা পাবো তার সবটুকু রস নিংড়ে নেব। যেমন যতক্ষণ দিন থাকে পাখি দুচোখ ভরে পৃথিবী দেখে। পুরনো নতুন সব।

যত রাত বাড়ে আমরা পাখি হয়ে উঠি। দুটো ডানা মেলে উড়ে যেতে চাই। বিষয়বস্তু খুঁজি বেঁচে থাকার। শুধুই একটা খোলস , ছন্দ এই নিয়ে কি করবো? যুগ নয় অস্পষ্ট ঘটনা ঘটে যেতে থাকে। সেসব দেখতে দেখতে একটা খোঁড়া পাখির বাসা দেখি। বুঝি আমরা প্রতিদিন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকি ডানার অক্ষমতা থেকে। বালিশ দিয়ে রাত পার করা যায়, ডানা দিয়ে উড়ে যাওয়া যায়, ছন্দ থেকে ছড়া বানাতে পারি , কই কবিতারা তো কোনো অবলম্বন ই রাখে না ? তারা শুরু করে অন্ধকার থেকে, শেষ হয় অন্ধত্বে।



No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব...